বইটির বিবরণ
পুঁজিবাদী ঈশ্বর এবং প্রেমিকা একটি বিদ্রোহী কাব্যভাষ্যের নাম। এই কাব্যগ্রন্থে কবি ব্যক্তিগত জীবনকে অতিক্রম করে সামগ্রিক অনুভব, প্রেমের মান-অভিমান, ঈশ্বরের মুখোমুখি প্রশ্ন ও সমাজের পুঁজিবাদী কাঠামোকে ছুঁয়ে দেখেছেন ব্যতিক্রমী এক কবিস্বরে। এই কাব্যগ্রন্থে প্রেম যেমন জীবনের আলো-ছায়ায়, বিচ্ছেদ যেমন গভীর অন্ধকারের মতো হৃদয়ের বেদনার্ত ঢেউয়ে, প্রকৃতি যেমন যত্নে ও ভালোবাসায়, ব্যক্তিগত সম্পর্ক যেমন অস্পর্শীয় মায়ায় বেঁচে থাকে, তেমনি তা হয়ে উঠেছে পুঁজিবাদের পৃথিবীতে পুরুষতান্ত্রিক ঈশ্বরের তৈরি ভ্রান্ত ন্যায়ের বিরুদ্ধে এক আন্তর্জাগতিক আর্তি বা সাধনা। কবিতাগুলোর ভাষা একাধারে কোমল ও তীব্র, যেখানে প্রেমিকা কোনো এক আধ্যাত্মিক দ্যোতনায় রূপান্তরিত, আবার ঈশ্বরও হয়ে ওঠেন পুঁজিবাদী প্রতিমা-নির্লিপ্ত ও প্রাতিষ্ঠানিক এক সত্তা। কবিতাগুলো নানা স্তরে সমাজের বৈষম্য, অর্থনৈতিক শোষণ এবং মানুষের অন্তর্নিহিত অনুভূতিকে স্পর্শ করে। কবি এই কাব্যগ্রন্থে ক্ষমতার বেআইনি প্রভাব এবং মানবিক সম্পর্কের সূক্ষ্মতার সম্বন্ধ চিত্রায়ন করেছেন। কবিতার প্রতিটি পঙ্ক্তি যেন এক একটি নির্জন বিপ্লব, যেখানে পাঠক নিজেকে খুঁজে পাবেন ভালোবাসার, প্রতিবাদের ও আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি। এটি কেবল প্রেম বা বিরহের কাব্য নয়, এটি এক সময়ের দলিল, অনুভবের অন্তর্যাত্রা এবং এক কবির নিঃশব্দে জেগে ওঠার শব্দ-সংগ্রাম। যারা প্রগাঢ় আত্মবিশ্লেষণ ও মেটাফোরে ভরপুর গভীর কবিতা ভালোবাসেন তাঁদের জন্য এই পাঠ আনন্দদায়ক হতে পারে।
লেখকের পরিচিতি
কবি মনিকা মারইয়াম আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এক জাগ্রত কণ্ঠস্বর। তিনি সমাজের নানা বৈষম্যের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদ ও মানবিক অনুভূতির প্রকাশ ঘটিয়ে চলেছেন নীরবে। ১৯৯২ সালের ৬ এপ্রিল টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানায় তাঁর জন্ম। প্রাক-কৈশোর থেকেই সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগী এই কবি শিক্ষাজীবনে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক-স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
কবি তাঁর লেখায় বাস্তব ও পরাবাস্তবের সংমিশ্রণে এমন এক দ্যোতনার ঢেউ সৃষ্টি করেন, যা পাঠকের মনোজগৎকে প্রবলভাবে স্পর্শ করে। তিনি সাহিত্যকে কেবল বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেই দেখেন না বরং সমাজের সূক্ষ্ম চিত্র ও সংকটে প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করেন। সমাজ ও সংস্কৃতির অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ এই ভাবুক সাহিত্যের মাধ্যমে নতুন চেতনার আলোকবর্তিকা প্রজ্বলিত করে চলেছেন।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: বিষণ্ণতার এলিজি (২০২০), নীল সমুদ্রস্নানে (২০২৪)।